
বাইরে একটানা ঝরছে বর্ষার মুষলধারা। কখন থামবে কিংবা আদৌ থামবে কিনা তাও জানা নেই। অথচ এই বৃষ্টি মাথায় করে এ বেলা বাইরে না বেরুলেই নয়। ভাবছেন বরষতি কিংবা ছাতি মাথায় এক দৌড়ে কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু মুষলধারার বৃষ্টি যখন এই বর্ষাতি কিংবা ছাতির বাধ মানবে না তখন বরষাতি জল গায়ে মাখতে হবে। আবার আকাশে সূর্যের হাসি দেখে যে মানুষটি দিব্যি ছাতির তোয়াক্কা না করেই বেরিয়েছিলেন ঘরের বাইরে, আচমকা এক পশলা বৃষ্টি বেশ করে ভিজিয়ে দিতে পারে তাকেও। আর হঠাৎ করে এই বৃষ্টির কবলে পড়ে ঠাণ্ডা কিংবা জ্বর বাধানোর পাশাপাশি গোলমাল বেধে যেতে পারে পরিধেয়তেও। বিশেষ করে সুতি কাপড় কিংবা সাদা কাপড়ে বৃষ্টির পানি আর কাদা মাখামাখি হয়ে বিপত্তির মুখোমুখি পড়তে হয় অনেককেই। তবে তাই বলে এমনতর বৃষ্টি দিনে আপনি যে রাতারাতি সব স্টাইলিশ পোশাক জলাঞ্জলি দিয়ে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করবেন তা তো নয়। বরং বৃষ্টিকে মানিয়ে এবং সবাইকে জানিয়েই এই বৃষ্টি দিনে চালু রাখতে হবে আপনার ফ্যাশন ভাবনাটুকু।ণ্ডতাই নিয়ে লিখেছেন রাশেদুল হাসান শুভ
বৃষ্টি দিনে কেমন পোশাক পড়বেন তা জানার আগে বৃষ্টির দিনে কেমন পোশাক পড়বেন না সেটা জানিয়ে দেয়া উচিত। আর এক্ষেত্রে প্রথমেই আসবে সুতি কাপড়ের প্রসঙ্গ। সাধারণত সুতি কাপড়ের পোশাকের বুনটটাই এমন থাকে যে এ ধরনের কাপড় বৃষ্টিতে ভিজলে তা শরীরের সাথে সেঁটে গিয়ে এক রকমের অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি করে। আবার একটু মোটা তন্তু বা মোটা বুনটের সুতির কাপড় শুকাতে দেরি হয় বলে তা শরীরের সাথে পানির সংস্পর্শটাও রাখে বহুগুণ। আর এ কারণে ঠাণ্ডা লাগার ভয়টাও থাকে বেশি। অন্যদিকে সুতি কাপড়ে বৃষ্টির পানি শুকিয়ে গেলে এতে এক ধরনের গুমোট গন্ধ কিংবা ছোট ছোট দাগ হতে পারে, যা বারোটা বাজিয়ে দিতে পারে আপনার প্রিয় পোশাকেরও।
সুতি পোশাকের মতো বৃষ্টির এই সময়টায় মোটা বুনটের কাপড় যেমন আদ্দি বা খদ্দরের পোশাক পড়া থেকেও বিরত থাকতে হবে। সেই সাথে বৃষ্টিতে যেসব কাপড় ভিজে গেলে আপনাকে অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিতে পারে সে ধরনের কাপড়ও এড়িয়ে চলতে হবে। অন্যদিকে বৃষ্টিতে কোনো কারণে আপনার প্রিয় পোশাকটি ভিজে গেলে বাড়ি ফিরে যতো দ্রুত সম্ভব তা শুকাতে দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। আর কাদাপানিতে ভিজে গেলে কিংবা দাগ বসে যাওয়ার আশংকা থাকলে তা ধুয়ে দেয়ার ব্যবস্থাও করতে হবে তাড়াতাড়িই।
বর্ষায় পড়া বারণ এমন পোশাকের পর এবার আসা যাক বৃষ্টিদিনের আরামদায়ক পোশাক প্রসঙ্গে। সাধারণত বৃষ্টির সময় বা মেঘলা মেঘলা আবহাওয়ায় এমন পোশাকই নির্বাচন করা উচিত, যা বৃষ্টিতে ভিজলে দ্রুত শুকিয়ে যায়। আবার হুট করে রোদ উঠলেও অস্বস্তি তৈরি করে না। এক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কৃত্রিম তন্তুজাত কাপড়ই আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে। তবে কৃত্রিম তন্তুজাত কাপড়ে যাদের এলার্জি আছে কিংবা যারা এ ধরনের কাপড় পড়ে স্বস্তি পান না তারা জর্জেট, সিল্ক কিংবা দেশি ভয়েল ধরনের কাপড়ের পোশাক পড়তে পারেন। এছাড়া আমাদের দেশের রাজশাহী সিল্ক বা হাফসিল্ক, সুতি জর্জেট বা বেক্সি জর্জেটেরু তৈরি পোশাকগুলোও বর্ষার দিনে আপনাকে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা দেবে।
কাপড়ের ধরনের পর আসা যাক কাপড়ের ছাট আর রঙের বিষয়ে। সাধারণত বর্ষার এই সময়টা নীল, কমলা বা উজ্জ্বল যে কোনো রঙের পোশাকই বেশি মানায়। বিশেষ করে যেসব দিনে আকাশ মেঘলা থাকে সেসব দিনে খানিকটা উজ্জ্বল রঙের পোশাক পড়াই ভালো। একই ভাবে মেঘের কোল ঘেঁষে বেরিয়ে আসা হঠাৎ রোদেও ভালো লাগে যে কোনো উজ্জ্বল পোশাক। তবে পোশাকের এই উজ্জ্বল রঙ যেন চোখে লাগার মতো দৃষ্টিকটু না হয় সেটুকু বুঝে নিতে হবে আপনার রুচিবোধ থেকেই। তাছাড়া যেসব রঙের কাপড় বৃষ্টির পানিতে ভিজে এক ধরনের স্বচ্ছতা তৈরি করে আপনাকে অস্বস্তিতে ফেলে দিতে পারে, এমন রঙের বা বুনটের পোশাক এড়িয়ে চলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
বৃষ্টির সময় রাস্তায় বা চলতে পথে কাদাপানির ঝক্কিতে যেন আপনার মূল্যবান পোশাকের বারোটা বেজে না যায় সেজন্য খুব বেশি নিচু বা পায়ের কাছে পড়ে এমন প্যান্ট, ট্রাউজার বা সালোয়ার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। এছাড়া এ সময়ের সালোয়ার কিংবা কামিজ খানিকটা ঢিলেঢালা হলে তা বৃষ্টিতে ভেজার পর যেমন দ্রুত শুকিয়ে যায় আবার হঠাৎ রোদ উঠলেও অস্বস্তি তৈরি করে না। বিশেষ করে বৃষ্টির সময় বাইরে বেরুতে হলে স্কিনটাইট জিন্স বা চুড়িদার সালোয়ারের মতো পোশাক এড়িয়ে চলাটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
বর্ষায় পোশাকের ধরন, রঙ আর ছাটের কথা গেল। কিন্তু এতকিছুর পর যদি এই বর্ষায় আপনার মূল্যবান কাপড়ের যত্নের কথা বলা না হয় তাহলে আলোচনাটা অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। মূলত বর্ষার সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে বলে কাপড় সহজে শুকাতে চায় না এবং কাপড় নষ্ট হওয়ার ভয়ও বেশি থাকে। এজন্য কাপড় ভালোভাবে শুকানোর বিষয়টিতে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া কাপড় শুকানোর পর ইস্ত্রি করে রাখা উচিত। এতে কাপড়ের ছত্রাক নষ্ট হয়ে যায়। বিশেষ করে বাচ্চাদের কাপড়ের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। সাদা বা হালকা যে কোনো রঙের কাপড় ভিজে গেলেই পানিতে ধুয়ে নিতে হবে যেন তাতে দাগ বা তিলা না পড়ে। এছাড়া মাঝে মাঝে আলমারি খুলে ফ্যানের বাতাস ঢুকতে দিলে কাপড়ের মধ্যকার গুমোট ভাবটাও কেটে যাবে। অন্যদিকে বর্ষায় আপনার পোশাকে কাদা লাগলে পুরো কাপড় সাথে সাথে ডিটারজেন্টে না ডুবিয়ে প্রথমে আলতো করে কাদা লাগা অংশটুকু ধুয়ে নিয়ে তারপর আলাদাভাবে পুরো কাপড়টি ধুয়ে ফেলতে হবে।