০১. সার্ভিস চার্জের নামে প্রতারণা
বাংলাদেশের প্রথম এমএলএম কোম্পানি জিজিএন বা গ্লোবাল গার্ডিয়ান নেটওয়ার্ক ১৯৯৮ সালে যখন তাদের কোম্পানি শুরু করে তখন সাধারণ অবুঝ ডিস্ট্রিবিউটরদের থেকে হিসাব ছাড়া সার্ভিস চার্জ আদায় করে। পরে যখন সদস্যরা বুঝলো যে তাদের সাথে প্রতারণা করা হয়েছে তখন কোম্পানি বলেছিলো তাদের সার্ভিস চার্জ ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু তা ফেরত দেওয়ার আগেই তারা লাপাত্তা হয়ে যায়।
০২.পিপিসির মাধ্যমে টাকা আÍসাৎ

ডেসটিনি-২০০০ লি: কর্তৃক ২০০১ সাল থেকে একটানা ২০০৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ ডিস্ট্রিবিউটরদের বুকিং পদ্ধতিতে পিপিসির মাধ্যমে ২৭৭৫ টাকা জমা দিয়ে কাজ করার সুযোগ প্রদান করে। ওই টাকার এডজাস্ট করার কঠিন পদ্ধতি দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে তারা। কয়েক লক্ষ মানুষ থেকে যে টাকা তারা সংগ্রহ করেছিলো তা আর কেউই ফেরত পাননি।
০৩. শপিং মলের নামে প্রতারণা
চট্ট্রগ্রামের রিচ বিজনেস সিস্টেম লি: ২০০৩ সালে শপিং মলের ওপর ইনভেস্ট করার নামে মানুষ থেকে টাকা সংগ্রহ করে। তাদের “রিচ আই বাজার” নামের শপিং মলগুলো লোকসানের কারণে অনেক জায়গাতে বন্ধ হয়ে গেছে। অথচ তারা এর ওপরেই দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে টাকা সংগ্রহ করে প্রতারণা করছে। একই ভাবে সেইফ ওয়ে টু লাইফ ও ভিসন কোম্পানি প্রতারণা করে অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছে।
০৪. প্রশিক্ষণের নামে প্রতারণা
বিজনেস ডট কম নামের একটি এমএলএম কোম্পানি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কোর্স নিয়ে বাজারে আসে। অল্প সময়ে খুব ভালো সারা পেলেও তারা সুযোগ বুঝে পালিয়ে যায়। এরপর ব্রাভো আইটি ইন্টারন্যাশনাল লিঃ, স্বপ্ন প্রাইভেট লি:, আরডিএল, রাইটওয়ে ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি কোম্পানি বিভিন্ন কোর্সের নামে টাকা সংগ্রহ করে মার্কেট থেকে হারিয়ে যায়।
০৫. নিম্ন মানের হারবাল পণ্য দিয়ে প্রতারণা
২০০১ সালের পরপরই গ্যানেক্স বাংলাদেশ (প্রাঃ) লিঃ নামের একটি এমএলএম কোম্পানি নিম্ন মানের হারবাল ঔষধ বিক্রির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। তারা মালয়েশিয়া থেকে হারবাল পণ্য আমদানি করে বলে সবাইকে জানালেও পরে প্রমানিত হয় কিছু পণ্য এসেছিলো বাইরে থেকে বাকিটা বাংলাদেশ থেকেই উৎপাদন করা হতো। উক্ত অভিযোগে কোম্পানির মালিক কর্তৃপকে পুলিশ আটক করেছিলো। এরপর নাম পরিবর্তন করে প্রমিজ প্রাইভেট লি: নামে কোম্পানিটি চালিয়ে যায়। একই ভাবে সাদেক ফার্মাসিউটিকেল লি:, হার্বালাইফ, নিউট্রি ফুড লি:, কার্লো ফার্মা (প্রাঃ) লিঃ, ডি এক্স এন হেল্থ (বিডি) লিঃ, জনকল্যাণ, ফোর লাইফ (প্রাঃ) লি: ইত্যাদি কোম্পানি নিম্ন মানের পণ্য বিক্রয় করার কারণে বন্ধ হয়ে যায়।
০৬. চড়া দামে পণ্য বিক্রয় করে প্রতারণা
বাংলাদেশে যারা শুধুমাত্র পণ্য বিক্রয় করে এমএলএম ব্যবসা করছেন প্রায় তাদের প্রত্যেকের নামে চড়া দামে পণ্য বিক্রয়ের অভিযোগ রয়েছে। তারমধ্যে আছে ডেসটিনির কালো জিরার তেল, ই-লিঙ্কসের ব্রেসলেট, টিয়েনসি ও গেনো ই ওয়ার্ল্ডওয়াইডের ঔষধ, আপট্রেন্ড ডিস্ট্রিবিউশন (বিডি) লিঃ এর পানির জার ইত্যাদি। এই সবগুলো কোম্পানিই চড়া দামে গ্রাহকের কাছে পণ্য বিক্রয় করে আবার তাদেরকেই ওই টাকার কিছু অংশ ফেরত দিচ্ছে। বলার যেন কেউই নেই।
০৭. গাছের ওপর বিনিয়োগের নামে প্রতারণা

ডেসটিনি-২০০০ লি: যখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম, তখন ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে ২০০৬ সালের জুন মাস থেকে “ট্রি প্লান্টেশন লি:” নামের একটি প্রজেক্ট চালু করে। পরিকল্পিত কোন গাছের প্রজেক্ট না থাকলেও তারা গাছের উপর বিনিয়োগের নামে মানুষ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে। তারা আগে প্রত্যেক ইনভেস্টের সাথে গাছের একটি সার্টিফিকেট দিত। কিন্তু যখন দেখা গেলো তাদের যেসব প্রজেক্টে এখনও গাছ লাগানো হয়নি সেসব প্রজেক্টের গাছের সার্টিফিকেট বিক্রয় করছে। পরে পত্রিকায় এই নিয়ে লেখা-লেখি হলে তারা সার্টিফিকেট না দিয়ে শুধু মানিরিসিট দিয়েই শেষ করেছে। একই পদ্ধতিতে পরবর্তিতে নিউওয়ে, ইউরো ট্রি প্লান্টেশন এবং টিসিএল নামের এমএলএম কোম্পানি “ট্রি প্লান্টেশন লি:” চালু করে মানুষ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
০৮. ফ্লাট বিক্রির নামে প্রতারণা
মাত্র দশ হাজার টাকা বুকিং দিলেই ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া যাবে। লয়েড ভিশন লি: নামের একটি এমএলএম কোম্পানি এভাবেই তাদের প্রতারণা শুরু করে। কর্তৃপ গ্রাহকদেরকে বলে দশ হাজার টাকা বুকিং দিয়ে আমাদের কোম্পানি থেকে আয় করে আমাদের বাকী টাকা দিলেই আপনাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিবো। তারা আর আয়ও করতে পারে না আর ফ্ল্যাটও নিতে পারে না। কয়েক লক্ষ সদস্য থেকে তারা প্রতারণা করে এই টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। এছাড়া ডেসটিনি ডায়মন্ড বিল্ডার্স নামের একটি বিল্ডিং করার জন্য গ্রাহকদের থেকে প্রায় অর্ধযুগ আগে টাকা নিলেও এখন পর্যন্ত কোন বিল্ডিং করতে পারেনি। এম স্টার, গৃহ নির্মাণ ও রিচ বিজনেস সিস্টেম লি: নামের এমএলএম কোম্পানির নামে একই অভিযোগ রয়েছে।
০৯. প্লট বিক্রির নামে প্রতারণা
ঢাকা ও ঢাকার আসে-পাশের শহরে বছরে জমির দাম দশ গুণ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনই সময় প্লটে বুকিং দেওয়া। তাও আবার মাত্র দশ হাজার টাকার বিনিময়ে!! সঙ্গে অনেক কিছুই ফ্রী পাচ্ছেন। নিজস্ব যানবাহনে প্রজেক্ট দেখার সুযোগ। এসব লোভনীয় অফার দিয়ে প্লট-জমীর ব্যবসা করেছে অর্থ মাল্টিভিশন সিস্টেম লি:। এক সময় গ্রাহকরা নিজে আয় করে বা নিজের পকেট থেকে টাকা দিতে না পারলে এর সবটুকু মালিক হয়ে যাচ্ছে কোম্পানি নিজেই। প্লট বিক্রির নামে এভাবেই প্রতারণা চলছে।
১০. দশ মাসে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার নামে প্রতারণা
২০০৯ সালের শেষের দিকে স্বর্ণের বিজনেস করে দশ মাসে বিনিয়োগের দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার নাম করে মানুষের থেকে টাকা সংগ্রহ করতে থাকে ইউনিপে টুইউ বাংলাদেশ লি: নামে একটি কোম্পানি। প্রথম কিছু দিন তারা ঠিকঠাক মতো মানুষের টাকা ফেরত দিতে থাকলো। এরপর সময় বুঝে এক সময় উধাও হয়ে গেলো। এর কিছুদিন পরে একই গ্রুপের আবার নতুন সংস্করণে ভিসারেভ নামের একটি কোম্পানি বাংলাদেশে এলো। তারা ইউনিগ্রুপের নাম ভাঙ্গিয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেলো। ভার্জিন গোল্ড নামের একই গ্রুপের আরো একটি কোম্পানি এলো। সবগুলোই অল্প কিছু দিন চলে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। তাদের টাকা আত্মসাতের ঘটনা বাংলাদেশের সব শ্রেনীর মানুষ জানলেও সরকারের পক্ষ থেকে শুধু বিজ্ঞাপন দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছেন। এখন এই কোম্পানির বিনিয়োগ কারীরা মহা বিপদে থাকলেও তাদের ব্যাপারে ভাববার যেন কেউই নেই।
১১. সার্ভের নামে প্রতারণা
অনলাইনে আউট সোর্সিংয়ের নামে এমএলএম এর মাধ্যমে প্রতারণার আরেক উপায় হচ্ছে “সার্ভে”। ইউনিপে যখন ধ্বংশের মুখে তখনই স্পিক এশিয়া অনলাইন নামের একটি এমএলএম কোম্পানি প্রতারণার নতুন ফাদ সার্ভে করে বারমাসে তিনগুণ টাকা দেবে বলে ঘোষণা দেয়। তাদের হটাৎ এমন অফার দেখে মানুষ ঝড়ের মতো স্পিক এশিয়াতে টাকা রাখতে শুরু করলো। বাংলাদেশের সবগুলো এমএলএম কোম্পানির মধ্যে অল্প সময়ে সবচেয়ে দ্রুত বিস্তার করেছিলো এই কোম্পানিটি। স্পিক এশিয়া বন্ধ হয়ে গেলে এশিয়ান বুল, সার্ভে ওয়ার্ল্ড, ভেরি সার্ভে, গ্রীন সার্ভে ইত্যাদি কোম্পানি একই উপায়ে মানুষের সাথে প্রতারণা করে।
১২. মাল্টিপারপাসের নামে প্রতারণা
সার্ভে যখন মানুষের কাছে একসময় গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলে তখন ইজেন ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কোম্পানি প্রতারণার আরেকটি উপায় বের করে। তারা বলে আমরা রিয়েল এমএলএম করার জন্য মাল্টিপারপাসের মাধ্যমে ব্যবসা করে বারমাসে দ্বিগুণ দেই। মানুষ তখন এখানে হুমড়ি খেয়ে পরে। মাল্টিপারপাসের নাম ভাঙ্গিয়ে এমএলএম করতে সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে নিষেধ করা হলেও বাংলাদেশে এই মূহুর্তে মাল্টিপারপাসের নামে সব থেকে বেশী প্রতারণা করছে। তাদের মধ্যে আরো আছে ডেসটিনি-২০০০ লি:, র্যাবনেক্স লি:, মাইক্রোট্রেড লি:, সফট ই ওয়ার্ল্ড লি:, আর্থ ডিএসএল, এইমওয়ে কর্পোরেশন লি: ইত্যাদি।
১৩. শেয়ার মার্কেটে ব্যবসার নামে প্রতারণা
দেশে এবং বিদেশে শেয়ার ব্যবসা করে দ্রুত টাকা কয়েক শত গুণ থেকে কয়েক হাজার গুণে উন্নিত করা যায় এমন একটি গুজব উঠলো। মানুষ সব ছেড়ে চলে আসলো শেয়ার ব্যবসার নামে তথাকথিত প্রতারণার আরেকটি ফাদে। লিজেন ভ্যাঞ্জার, রিচ বিজনেস সিস্টেম লিঃ, ফরেক্স, ফরেক্স ফর ইউ, ফরেক্স শেয়ার ইত্যাদি কোম্পানি শেয়ারের নামে টাকা সংগ্রহ করলো। এরপর শেয়ার ব্যবসা মন্দ বলে সবগুলো কোম্পানি বন্ধ হয়ে যায়।
১৪. বোর্ড ভাঙ্গা কোম্পানির নামে প্রতারণা
সকলের সব প্রতারনাকে ছাপিয়ে মার্কেটে আসে একেবারেই নতুন ধাচের প্রতারণা কোম্পানি বোর্ড ভাঙ্গা কোম্পানি! নাম শুনে হয়তো অনেকে অবাক হতে পারেন কিন্তু তাদের মার্কেটিং প্লানকে তারা বোর্ড ভাঙ্গা প্লান বলেই চালায়। টিভিআই বা ট্রাভেল ভ্যাঞ্জার ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কোম্পানি প্রত্যেক সদস্য থেকে একুশ হাজার পাচশত টাকা করে সংগ্রহ করলো ফাইভ স্টার হোটেলে সাত দিন সাত রাত থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করবে বলে। এই টাকা দিয়ে পৃথিবীর যেকোন দেশের ফাইভ স্টার হোটেলে থাকা যাবে। আর একজন সদস্য যখন এভাবে দুই জনকে সদস্য করতে পারবে তখন সে পাবে তেতাল্লিশ হাজার টাকা। এরপর যখন আরো দুইজনকে সদস্য করতে পারবে তখন পাবে আট লাখ টাকা। একটু অন্য রকম প্লান বলে ল ল মানুষ এখানে জয়েন করে প্রতারিত হলো। একই উপায়ে বিভিন্ন কোম্পানি হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
১৫. পামওয়েলের ব্যবসার নামে প্রতারণা

এই মূহুর্তে বাংলাদেশে সোয়াবিনের প্রচুর চাহিদা। তেলের বাজারে এমন সংকটময় মুহুর্তেব দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছে পামওয়েলের ব্যবসা করে বারো মাসে দ্বিগুণ টাকা ফেরত দেওয়ার প্রজেক্ট এশিয়ান কিং লি: নামে একটি কোম্পানি (!) বাংলাদেশের কিছু বোকা মানুষ মনে করলো ঠিকই তো পামওয়েলের ব্যবসার এখন সুবর্ণসুযোগ। এখানে টাকা রাখলে হারানোর ভয় নেই। হাজার হাজার মানুষ এখানে টাকা বিনিয়োগ করে পরে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসে যায়।
১৬. বাইব্যাক পলিসির নামে প্রতারণা
বাইব্যাক পলিসি মানে হচ্ছে গ্রাহক পণ্য ক্রয় করে পুনরায় কোম্পানির কাছে ফেরত দিতে পারবে। অনেকে মনে করেন এমএলএম এ বাইব্যাক পলিসির বৈধতা রয়েছে। এতে শতভাগ পণ্য বিক্রয় করা নিশ্চিত হয়। কিন্তু এইমওয়ে কর্পোরেশন লি: নামের একটি কোম্পানি নিয়ম করেছে পণ্য ক্রয় করলেই তা ফেরত দিতে হবে !! ফেরত দেওয়ার মানে হচ্ছে যে টাকা গ্রাহক বিনিয়োগ করবে তা ছয় মাসে দ্বিগুণ হারে পন্যের পরিবর্তে টাকা ফেরত নেবে। একই ভাবে ইসলামী সফট বিডি লি:, সাকসেস ওয়ে লি:, গ্রেট ওয়াল লি ইত্যাদি কোম্পানি মানুষের সাথে নতুন উদ্ভাবিত উপায়ে প্রতারণে করছে।
১৭. ইন্টারনেটে ক্লিকের মাধ্যমে প্রতারণা
বাংলাদেশের মানুষ ইন্টারনেট সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা রাখে না বলে এই সেক্টরে প্রতারণা করার সুযোগ অনেক বেশি রয়েছে। ডোলেন্সার নামের একটি কোম্পানি প্রতারণার নতুন ফাদ তৈরী করলো। সাড়ে সাত হাজার টাকা ফি দিয়ে গ্রহক হয়ে ইন্টারনেটে ক্লিক করার মাধ্যমে ইনকাম করার সুযোগ দেয় তারা। নেটে আউটসোর্সিং এর কাজ বলে গ্রাহকদের থেকে হাজারে হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করে তারা। একই উপায়ে শেরাটন বিডি লি:, ডোল্যান্সার সহ আরো অনেকেই টাকা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
কোন কোম্পানির অনুমোদন নেই
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজারের উপরে এমএলএম কোম্পানি আছে। সরকার ২০০৯ সাল পর্যন্ত মাত্র ৭০টি এমএলএম কোম্পানির অনুমোদন দিলেও এরপর থেকে এসব কোম্পানির অনুমোদন বন্ধ রয়েছে। অথচ খুব অবাক করার বিষয় হলো এরই মধ্যে বাংলাদেশে দুই হাজারের বেশি এমএলএম কোম্পানি জন্ম নিয়েছে এবং অনেকেই মৃত্যুবরণ করেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়া থেকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন কোম্পানি বাংলাদেশে আসছে। কোম্পানি নামে তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করলেও আদতে এসব প্রতিষ্ঠানের কোনরকম অনুমোদন নেই। কেউ কেউ মাল্টিপারপাসের একটি সার্টিফিকেট কিনেই ব্যবসার পসরা নিয়ে বসেছে। কেউবা শুধু ট্রেড লাইসেন্স করেই প্রকাশ্যে ব্যবসা করছে। এমএলএম কোম্পানির যেহেতু এখন অনুমোদন দেওয়া হয় না তাই কেউবা তাদের সার্টিফিকেট অব ইনকর্পোরেশনের অনুমোদন নেওয়ার সময় ক্যাটাগরীতে ব্যবসার ধরণ লিখেছে, আমদানী-রপ্তানী, হারবাল পণ্য উতপাদন বা বিক্রয়, আইটি সফটওয়্যার, বহুমুখী পণ্য বিপণন, ট্রাভেল এজেন্সি ইত্যাদি।
সরকার কি বলছে ?
এমএলএম নিয়ে বাংলাদেশে নীতিমালা করা নিয়ে অনেক বৈঠক করেছে। সর্বশেষ মিটিংয়ে বানিজ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক যে খসড়া করা হয়েছে তার ষষ্ঠ অধ্যায়ে ‘অপরাধ দণ্ড’তে বলা হয়েছে, কতগুলো ক্ষেত্রে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করা নিষিদ্ধ। এর মধ্যে রয়েছে অবস্তুগত বা অলীক পণ্য, স্থাবর সম্পপত্তি, বৃ, ফ্যাট ও প্লট বিক্রয়, কমিশন বা বোনাস হিসেবে কোনোরূপ শেয়ার বা ঋণপত্র ক্রয়-বিক্রয়, বোনাস স্কিম, কিস্তির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ বা সঞ্চয় বা বিলিবণ্টন এমনকি লটারির টিকিটও বিক্রি করা যাবে না। এ ছাড়া প্লাটিনাম, স্বর্ণ, ব্রোঞ্জ, পারদ, হাইড্রো কার্বন, তেজস্ক্রিয় পদার্থ, ¯পর্শকাতর রাসায়নিক পদার্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক, ধাতব মুদ্রা, অশ্লীল ছবির ফিল্ম, সিডি, ভিসিডি; উগ্র মৌলবাদী বই, ফিল্ম, সিডি, ভিসিডি এবং রাষ্ট্র ও ধর্মবিরোধী বা ধর্ম বিকৃতকারী বই বা প্রচারপত্র, ফিল্ম, সিডি ও ভিসিডি বিপণন নিষিদ্ধ। এসব পণ্য ও সেবা বিপণন করলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। পণ্য বাজারজাতকরণের আগে সরকার নির্ধারিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য ও সেবার গুণগত মানের সনদ, পণ্যের গায়ে উৎপাদান, উৎপাদনের তারিখ, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার তারিখ, মূল্য ইত্যাদি প্রকাশের বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংরণ আইন ও প্রচলিত অন্যান্য আইন মেনে চলতে হবে। খসড়া নীতিমালায় এমন অসংখ্য তথ্য বিবরণী থাকলেও আদতেও কেউ কোন আইন যেমন মানেন না তেমনি এই আইনটি পাশ বা কার্যকারী করার ক্ষেত্রে ও যেন উদাসীনতা লনীয়। আর তাই সুযোগ বুঝে প্রতারক এমএলএম কোম্পানিগুলো নানান সময় নানান প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন উপায়ে প্রতারণা করে চলেছে।