- এ রাতে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) স্বীয় পাখাগুলো বিশেষ করে সবুজ দু'টি পাখা মেলে ধরেন। - এ রাতে একজন মুমিন কি দোয়া পড়বে এ প্রসঙ্গে হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন ঃ আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ্ (সাঃ)! যদি শবে ক্বদর পেতে সক্ষম হই তাহলে কি পড়ব? রাসূল (সাঃ) বললেন, অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি তো ক্ষমা পছন্দ করেন, আমাকেও ক্ষমা করুন। (তিরমিযি, মসনদে আহমদ) হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, এ রাতে পড়ার জন্যে আল্লাহ্র রাসূল যে দোয়া শিখিয়েছেন তা' হলো ঃ অর্থ ঃ আল্লাহ্! আজকের রাতে আমাকে শবে ক্বদরের ফজিলত দান করো। আমার কাজ-কর্মকে কঠিন থেকে সহজের দিকে নিয়ে নাও। আমার অক্ষমতা কবুল করো। আমার পাপসমূহ মার্জনা করো। হে যোগ্য বান্দাদের প্রতি মেহেরবান খোদা! শবে ক্বদর কোন্ রাত্রি এ নিয়ে বিভিন্ন মত প্রকাশ করা হয়েছে। হযরত ওমর (রাঃ)-এর যুগে সর্বসম্মতিক্রমে স্বীকৃত হয়েছে যে, ইহা রমযানের শেষ দশ দিনে রয়েছে। কোনো হাদিসে ১৭, আবার কোনো হাদিসে ২৩, কোনো হাদিসে ২৪ এবং বেশিরভাগ আলেমের মতে ২৭ তারিখ শবে ক্বদর। হযরত আয়েশা (রঃ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, রমযানের শেষ দশদিনের বেজোড় রাত্রে শবে ক্বদর তালাশ করো। (বুখারী ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা-২৭০) বিভিন্ন মতের সামঞ্জস্য বিধান করে হযরত ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) বলেন, আসলে এসব বর্ণনা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর- যেমন কেউ জিজ্ঞেস করলো, হুজুর আমরা শবে ক্বদর অমুক রাত্রিতে তালাশ করবো কি? উত্তরে হুজুর বললেন, হঁ্যা, তালাশ করো। প্রকৃত পক্ষে শবে ক্বদর নির্ধারিত, এতে কোনো পরিবর্তন হয় না। আবু কুলাবা বলেন: শেষ দশকের রাতগুলোতে ইহা ঘুরাফেরা করে পরিবর্তিত হয়। ইমাম মালিক (রহঃ), ইমাম সুফিয়ান সওরী (রহঃ), ইমাম আহমদ ইবন খুযাইম (রাঃ)-এর মতে ইহাই সঠিক। (তাফসীরু ইবন কাসীর, বরকতের রাত-৪৪) ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন, রমযানের শেষ দশ রাতে সমানভাবে শবে ক্বদর অনুসন্ধান করা উচিত, হযরত শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী (রহঃ) বলেন, শবে ক্বদর ২টি। ১. ১টিতে বিশ্ব প্রশাসনের বিধি-ব্যবস্থা নির্ধারিত হয়। এই শবে ক্বদর অনির্দিষ্ট, এক এক বছর এক এক রাতে অনুষ্ঠিত। ২. ২য়টি হলো কল্যাণ, ফয়েয ও বরকত সাওয়াব বৃদ্ধি এবং ফেরেস্তাদের অবতরণ ইত্যাদির জন্যে এ রাত রমযানের শেষ দিকের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে রয়েছে। ঘটনাক্রমে কুরআন নাযিলের সময় উভয় রাত মাহে রমযানে একত্রিত হয়। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগা) এ পবিত্র ও মহিমান্বিত রাতে আল্লাহ্র রহমত ও মাগফিরাত থেকে যারা বঞ্চিত থাকবে তারা হলো: ১. নেশাখোর, মাদকদ্রব্য ব্যবসায়ী। ২. মাতা-পিতার অবাধ্য সন্তান। ৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী। ৪. ইচ্ছাকৃত শক্তি থাকা সত্ত্বেও নামাজ তরককারী। ৫. বিনা কারণে অপর মুসলমান ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী। (তাফসীরু কাশফিল আসরার ১ম খণ্ড পৃ: ৫৪৬) উপরোক্ত দোষে যারা দোষী তারা এ রাতের বরকত পাওয়ার জন্যে প্রথমেই খালেছ অন্তরে তওবা করতে হবে। তাদের তওবা আল্লাহ্ কবুল করার পরই তারা এই রাতের ফযিলত লাভ করবে। এ রাতে যারা নিজের অপরাধ ক্ষমা চেয়ে এবং আল্লাহ্র রহমত কামনা করে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কাঁদবে এবং যার চোখ দিয়ে পানি বের হবে, বুঝতে হবে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) তার হাতের ওপর হাত দিয়েছে। (কাশফুল আসরার তাফসীর গ্রন্থ- ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৬৫) এ রাতের নামাজ ও ইবাদতের উসিলায় আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বান্দার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করেন।
যেমন বর্ণিত হয়েছে ঃ হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহ্র নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ) এরশাদ করেছেন, যে লোক ঈমানের সাথে সাওয়াবের নিয়্যতে ক্বদর রাতে আল্লাহ্র ইবাদতের জন্যে দরবারে এলাহীতে দণ্ডায়মান হবে তার বিগত জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (বুখারী শরীফ- ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-২৭০) এ হাদিসে দণ্ডায়মান হওয়ার যে কথা রয়েছে তা' শুধু নামাযের অবস্থায় দণ্ডায়মান হওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এ রাতে নামাজ, তিলাওয়াতে কুরআন, যিকির, ইস্তিগফার, তসবিহ পাঠ, বেশি বেশি দরুদ শরীফ পড়া একান্ত করণীয়। আল্লামা আলুসী (রহ.) লিখেছেন, লাইলাতুল ক্বদরে সর্বপ্রকার ইবাদতই হওয়া উচিত। যেমন নফল নামাজ, তেলাওয়াতে কুরআনে কারীম, আল্লাহ্র যিকির তসবীহ পাঠ, ক্ষমা প্রার্থনা এবং দোয়া এসব থাকা উচিত। (ফাযায়েলে রমযান- মুফতি আমীমুল এহসান (রহঃ), পৃষ্ঠা-২৭) শবে ক্বদরের নফল নামাজ নামাজের নিয়ম হলো ঃ প্রথম ঃ দুই দুই রাকাত করে ১২ রাকাত নামাজ আদায় করা উত্তম। প্রথম চার রাকাতের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহার পর একবার সূরা ক্বদর ও তিনবার সূরা ইখলাস পড়ে সালাম ফিরিয়ে একশত বার দরুদ শরীফ পাঠ করা। দ্বিতীয় চার রাকাতের প্রতি রাকাতে সূরা ফাতিহা ও সূরা ক্বদরের পর সূরা ইখলাছ দশবার পড়তে হবে। এরপর সালাম ফিরিয়ে একশতবার দরুদ শরীফ পড়তে হবে। তৃতীয় চার রাকাতে একই নিয়মে সূরা ইখলাস ২৫ বার পড়তে হবে। এরপর একশত বার দরুদ শরীফ ও রাসূল (সাঃ)কে সালাম জানিয়ে নিজের গুনাহ ক্ষমা চেয়ে সমস্ত নবী ওলীগণের রুহে সাওয়াব রেসানী করতে হবে। দেশ, জাতি, মুসলিম উম্মাহর জন্যে দোয়া করতে হবে। শবে ক্বদরের নামাজের নিয়্যত ঃ উচ্চারণ ঃ নাওয়াইতু আন উছালিস্নয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকাআতাই ছালাতি লাইলাতিল ক্বাদরি মুতাওয়াজজিহান্ ইলা জিহাতিল কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লাহু আকবার। ্#৬১৫৫৩; হযরত ইমাম নববী (রহঃ) লিখেন, ক্বদরের রাতে জাগ্রত থেকে নফল নামাজ পড়া, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা এবং দরুদ শরীফ পাঠ করা উত্তম। ্#৬১৫৫৩; শবে ক্বদরের আরেকটি কাজ হলো, আত্মীয়-স্বজনের কবর যিয়ারত করা এবং দান-সদকা করা। এ রাতের বরকত, মাগফিরাত ও রহমত পেতে হলে আমাদেরকে তওবার মাধ্যমে গুনাহমুক্ত হতে হবে। বেশি বেশি দরুদ শরীফ পড়ে রাসূলে খোদার মহব্বত অন্তরে সৃষ্টি করতে হবে। বনি ইসরাঈলের শামসুন গাযীর মতো জিহাদের ময়দানে জীবনকে বিলিয়ে দিতে হবে। তবে ইবাদত-বন্দেগীতে ও জিহাদের পূর্বশর্ত হলো আল-কুরআনকে ভালোভাবে জানা-বুঝা ও উপলব্ধি করা। নিজ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আল-কুরআনের নূরে নূরান্বিত করা। যে দিন সমাজ ও রাষ্ট্রে এ কুরআনের ঝাণ্ডা উড্ডীন হবে সে দিনই আমাদের জন্যে উড্ডীন হবে হামদ, মাগফিরাত, রহমত ও কারামতের ঝাণ্ডা। তাই আসুন, আল্লাহ্র ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে বিশেষ নেয়ামত শবে ক্বদরের বরকত পাওয়ার যোগ্যতা সৃষ্টি করি। দোয়া করি হে আল্লাহ্! আমাদেরকে তোমার নিষ্ঠাবান বান্দা হবার তাওফীক দান করো। মুসলিম উম্মাহর মাঝে এমন ঈমান, ইখলাস ও তাক্বওয়াহ দাও, যার বলে বলীয়ান হয়ে তোমার কুরআনের রাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তারা যেন ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। হে আল্লাহ্! তোমার নূর, তোমার হাবিবের নূর, তোমার কুরআনের নূর, আমাদেরকে দান করো। নির্যাতিত মুসলিম জাতিকে তুমি নিজ রহমতেই হেফাজত কর। আমীন।